বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বস্ত্র খাতে নতুন বিনিয়োগের জোয়ার

বস্ত্র খাতে নতুন বিনিয়োগের জোয়ার

করোনাভাইরাসের মধ্যেই উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের পথে হাঁটছেন বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা। মহামারির কারণে গত বছরের প্রথম দিকে বিনিয়োগ সেভাবে হয়নি। তখন কোনোরকম টিকে থাকার চেষ্টা করেন তাঁরা। তবে বছরের শেষ দিক থেকে বড় বিনিয়োগের ঘোষণা আসতে থাকে।

বিনিয়োগ এতটাই বেড়েছে যে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্রয়াদেশ দিলে যন্ত্রপাতি পেতে সময় লাগবে দুই বছর। এমন তথ্য দিয়ে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুতা ও কাপড়ের চাহিদাও বাড়তে থাকে। তবে বিদেশি ক্রেতারা আগের চেয়ে কম লিডটাইম (ক্রয়াদেশ থেকে পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) দেওয়ায় সেই চাপ এসে পড়েছে দেশীয় বস্ত্রকলের ওপর। বাড়তি এই চাহিদা আগামী দিনেও বজায় থাকবে। তাই নতুন কারখানার পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণে মনোযোগী হয়েছেন তাঁরা।

 

 

বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) জানায়, তাদের সদস্য হওয়ার জন্য গত নভেম্বর থেকে চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ১০টি নতুন বস্ত্রকল আবেদন করেছে। কারখানাগুলো চলতি বছর থেকে শুরু করে আগামী দুই বছরে উৎপাদনে আসবে। এসব কারখানায় মোট বিনিয়োগ হচ্ছে ৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বস্ত্র খাতের অনেক কারখানা ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করছে। তবে সেই তথ্য-পরিসংখ্যান আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির কাছে নেই।

নতুন বিনিয়োগের ফলে আগামী দুই বছরে স্পিনিং খাতে ২০ লাখ স্পিন্ডল যোগ হবে। তা ছাড়া কাপড় উৎপাদনের নতুন মিলও আসবে। এমন তথ্য দিয়ে বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিশ্বখ্যাত দু-তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিন কিনে থাকেন। প্রচুর বিনিয়োগ হওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠান আগামী দুই বছরের জন্য বুকড। নতুন করে কেউ মেশিনের ক্রয়াদেশ দিলে তা ২০২৪ সালের আগে পাবে না।

 

প্রচুর বিনিয়োগের কারণ সম্পর্কে বিটিএমএর সভাপতি বলেন, ‘গত ২০ বছরে অনেকগুলো মিল ব্যবসা থেকে বেরিয়ে গেছে। অনেকে আবার আধুনিকায়ন করতে না পেরে পিছিয়ে গেছে। তা ছাড়া পাঁচ বছর পরপর বস্ত্রশিল্পে একটি সংস্কার হয়। সে জন্যই অনেক বিনিয়োগ আসছে। তাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে।’

মোহাম্মদ আলী ম্যাকসন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি নিজেও গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০ একর জমিতে দুই ধাপে ৮৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। তাতে ম্যাকসন্স গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান মেট্রো স্পিনিং, ম্যাকসন্স স্পিনিং এবং ম্যাকসন্স স্পিনিং (ইউনিট-২) গড়ে উঠবে। এসব কারখানায় ভ্যালু অ্যাডেড বা বেশি মূল্য সংযোজিত হয় এমন সুতা, কাপড় ও রাসায়নিক উৎপাদন হবে।

 

এদিকে ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুরে ৬৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে স্পিনিং মিল করছে করিম টেক্স লিমিটেড। ১ লাখ ১০ হাজার স্পিন্ডলের এই কারখানায় দিনে ৮০ টন সুতা উৎপাদিত হবে। আগামী বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ স্পিনিং মিলটি পুরোদমে উৎপাদনে যাবে। এর আগে জুলাই-আগস্টে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে।

জানতে চাইলে করিম টেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদ মিয়া বলেন, ‘করোনাকালে বিশ্বব্যাপী টি-শার্ট, ট্রাউজারের মতো নিট পোশাকের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সে কারণে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্যই আমরা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে ডিবিএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তুলছে ডিবিএল গ্রুপ। গত মাসে সেখানে ৬৩৭ কোটি টাকা বিনিয়োগে জিন্নাত টেক্সটাইল মিলস গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে পোশাক ও বস্ত্র খাতের শীর্ষস্থানীয় এই শিল্পগোষ্ঠী।

 

ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম বলেন, ‘জিন্নাত টেক্সটাইল মিলসে থাকবে ৫৬ হাজার ৫৪৪ স্পিন্ডল। উৎপাদন শুরু হবে ২০২৩ সালে। সেখানে সাধারণ সুতার পাশাপাশি বিশেষ কিছু সুতা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।’

ময়মনসিংহের ভালুকায় ৬৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ইউনিভার্সেল ডেনিম নামে একটি কারখানা গড়ে তুলছেন এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ। এখানে দৈনিক ১ লাখ গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদিত হবে। কর্মসংস্থান হবে সাড়ে তিন হাজার মানুষের।

জানতে চাইলে আবদুস সামাদ বলেন, ‘উৎপাদন শুরু করার জন্য আমাদের ডেনিম মিল প্রায় প্রস্তুত। তবে গ্যাস-সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদন শুরু করা যাচ্ছে না। ২০১৮ সালে আমরা গ্যাসের জন্য আবেদন করেছিলাম।’

 

বর্তমানে দেশীয় বস্ত্রকলগুলো নিট পোশাকের ৮৫-৯০ শতাংশ সুতা ও কাপড় সরবরাহ করে। আর ওভেন পোশাকের ক্ষেত্রে জোগান দেয় ৪০ শতাংশ। ফলে করোনার আগেও বস্ত্র খাতে বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। কমবেশি বিনিয়োগও হয়েছে। যেমন ভিয়েলাটেক্স গ্রুপ ২০১৮ সালে তাদের স্পিনিং মিলের স্পিন্ডলের সংখ্যা ৪২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৩২ হাজারে উন্নীত করেছে।

ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান কে এম রেজাউল হাসনাত প্রথম আলোকে বলেন, করোনাকালে ক্রেতারা লিডটাইম কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে সুতা বা কাপড় আমদানি করে রপ্তানি করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ, জাহাজ কবে আসবে, কেউ বলতে পারছেন না। দুই সপ্তাহ দেরি হলে ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সে কারণে বস্ত্রকলগুলোয় ক্রয়াদেশ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ভবিষ্যতে বাড়তি এ ব্যবসা বজায় থাকবে ধরে নিয়ে বিনিয়োগ করছেন উদ্যোক্তারা। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে বস্ত্রকলগুলো ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গেছে। এই পরিমাণ ব্যবসা আগে কখনোই আসেনি।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর