বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরের ভেতরে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

ঘরের ভেতরে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

ঘরের ভেতরে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করে অল্প সময়ে জীবনের চাকা বদলে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়ার গিয়াসের উপজেলার ইলিশিয়া এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক যুবক গিয়াসউদ্দিনের। জমি স্বল্পতার এই যুগে কম খরচে ঘরের ভেতরে এই পদ্ধতির মাছ চাষ নিজ এলাকা পেরিয়ে এখন পুরো জেলায় মৎস্যজীবী সবার কাছে মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। 

সফল মাছচাষি গিয়াস উদ্দিনের এই প্রয়াস ওই অঞ্চালের বেকার যুবকদের সামনে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন অনেকে। 

চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া গ্রামের যুবক গিয়াস উদ্দিন ২০১২ সাল থেকে মাছ চাষ করছেন। ইলিশিয়া এলাকার জমিদার বাড়ি ও আশপাশের ব্যক্তিগত পুকুর ইজারা নিয়ে তিনি সাদা জাতের মাছ চাষের শুরু করেন। উচ্চ শিক্ষিত যুবক গিয়াসউদ্দিনের সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি অবিচল ছিলেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে। 

গত আট বছরে গিয়াস উদ্দিন মাছ চাষের মাধ্যমে বদলে নিয়েছেন জীবনের চাকা। তিনি এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। মাছ চাষের বদৌলতে যেমন জীবনের গতি ফিরেছে, সেইসঙ্গে এগিয়ে নিয়েছেন লেখাপড়াও। অদম্য গিয়াস ইতিমধ্যে নিয়েছেন উচ্চতর ডিগ্রি।

সফল মাছচাষি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘যখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, চাকরি করবো না। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। সেই প্রতিজ্ঞা থেকে আট বছর আগে ২০১২ সালে বাড়ির পাশে ইলিশিয়া এলাকায় ব্যক্তিগত ৭-৮টি পুকুর ইজারা নিয়ে শুরু করি সাদা জাতের মাছ চাষ। কায়িক পরিশ্রম আর সততাগুণে আমি আজ সফলও হয়েছি। আট বছর যাবত নিজেকে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘মাছ চাষ আমার জীবনের গতি বদলে দিয়েছে। আজ আমি আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বী। আমার পরিবারও তাতে ভীষণ খুশি। এলাকাবাসীও আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমি নিজের জীবনের সফলতাকে বেকার জনগোষ্ঠী বিশেষ করে যুবকদের কল্যাণে নিহিত করতে সিদ্ধান্ত নিই। এরই আলোকে সর্বশেষ উদ্যোগটি নিই বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষ সূচনার মাধ্যমে।’

গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একদিন ইউটিউবে বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষের একটি কেস্ স্ট্যাডি পাই। সেটি অনুসরণ করে দেখি কীভাবে কম খরচে ঘরের ভেতরে মাছচাষ করা হচ্ছে। বাস্তবে এই পদ্ধতির মাছচাষ দেখতে আমি একাধিকবার কুমিল্লা গিয়েছি। সেখানে বেশ ক’জন চাষি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অনেক আগে মাছ চাষ শুরু করেছেন।’

গিয়াস উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছিলাম কুমিল্লা গিয়ে মাছ চাষের পদ্ধতি দেখে আসবো। তারপর এলাকায় সেটি শুরু করবো। ওইসময় অনেকে আমাকে পদ্ধতিটি দেখাতেও অনীহা দেখিয়েছিলেন। তবু আমার প্রচেষ্টা আজ আমাকে সেই কাজে মনোনিবেশ করেছে। অবশেষে চলতি বছরের ফেব্রয়ারি মাস থেকে আমি ১৩ ফুট প্রস্ত ও ১৩ ফুট দৈর্ঘ্য আয়তনের একটি ঘরে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছচাষ শুরু করলাম। এ চাষে প্রয়োজন অল্প পরিমাণের একটি জায়গা, সেখানে থাকবে একটি ট্যাগ (গোল আকারের খাঁচা) এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ চলে গেলে আইপিএস অবশ্যই থাকতে হবে। মূলত বিদ্যুতের পাম্পের সাহায্যে খাঁচার পানিতে বাতাস (অক্সিজেন) দিতে হয়। তাতে বুদ বুদ আকার সৃষ্টি করলে মাছ খাদ্যের প্রতি আগ্রহী হয়।’

সফল মাছচাষি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘প্রথমে আমি তেলাপিয়া মাছের চাষ করেছিলাম। মাছের পোনা ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ আমার খরচ পড়ে ১৪ হাজার টাকা। চারমাসে মাছ বিক্রি করে আয় করি ৩৪ হাজার টাকা। পরবর্তীতে গেল জুলাই মাসে শুরু করি দেশীয় জাতের শিং মাছের চাষ। জুলাই মাসের ২৭ তারিখ ১ হাজার ৪০০ লাইন সাইজের ৮ হাজার পোনা ছেড়েছি। ১ মাস ১৪ দিনে মাছের বর্তমান সাইজ দুইশত লাইনে উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রতিদিন ১০ কেজি করে খাদ্য দিতে হচ্ছে আট হাজার মাছকে।’ 

গিয়াস উদ্দিনের মতে, আগামী পাঁচমাস পর বায়োফ্লক পদ্ধতির চাষের শিং মাছ বিক্রি করতে পারবো। ওই সময় ৮ থেকে ১০টিতে হবে এককেজি মাছ। উল্লেখিত সময়ে মাছ চাষে অর্থাৎ মাছের খাদ্য ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ আমার খরচ পড়বে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করে আমার ভাগে আসবে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। 

মাছচাষী গিয়াস উদ্দিনের বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষ কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.বেনজির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এই পদ্ধতির মাছচাষ শুরু হয়েছে অনেকদিন আগে। তবে চকরিয়া উপজেলায় এই প্রথম যুবক গিয়াস উদ্দিন এই পদ্ধতির মাছ চাষ শুরু করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি এলাকাবাসীর জন্য সুখবর। বিশেষ করে এই অঞ্চালের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গিয়াস উদ্দিনের এই উদ্যোগটি মডেল হতে পারে।’

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই