বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অধিক বর্ধনশীল রুই মাছ চাষে সফল যশোরের চাষীরা

অধিক বর্ধনশীল রুই মাছ চাষে সফল যশোরের চাষীরা

ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ অধিক বর্ধণশীল রুই মাছের পরীক্ষামূলক চাষে যশোরে চাষী পর্যায়ে ব্যাপক সফলতা দেখা গেছে। প্রচলিত অন্যান্য জাতের মাছের চেয়ে ৩০ শতাংশ বর্ধণশীল এ মাছ চাষে ব্যাপক আশা দেখছেন মাছ চাষীরা। 

যশোর শহরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবছর এ মাছ চাষে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন তারা। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত জি-৩ এ রুই মাছের জাত সারাদেশে মাছ চাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের উদ্যোগে হালদা, পদ্মা, ও যমুনা নদী হতে উৎপন্ন রুই মাছ এবং বানিজ্যিকভাবে সমাদৃত একটি হ্যাচারি থেকে সংগৃহিত রুই মাছের সাথে জি-৩ রুই মাছের বৃদ্ধির হার তুলনা নিয়ে গবেষণা শুরু করে। 

পরীক্ষামূলক চাষের জন্য এই তিন জাতের রুই মাছ ২০২০ সালের একই সময়ে উৎপাদন করা হয়। উৎপন্ন রেনু ও পোনা যশোরে অবস্থিত ওয়ার্ল্ডফিশ কার্প জেনেটিক ই¤প্রুভমেনট কেন্দ্রে ৫৪টি হাপায় লালন-পালন করা হয়। 

মাছগুলি উপযুক্ত সাইজে উপনীত হলে তাদেরকে মেশিন এর সাহায্যে সনাক্তকরণের জন্য ‘প্যাসিভ ইনটিগ্রেটেড ট্রান্সপোনডার’ বা পিট নামক একপ্রকার যন্ত্রের সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়। তারপর পোনা মাছগুলিকে একত্রে একটি পুকুরে চাষ করা হয়। 

পরীক্ষামূলক ফলাফলের পর তৃতীয় প্রজন্মের এই জি-৩ রুই মাছ একই বছরে যশোরের ৬ জন হ্যাচারি মালিকদের মাঝে প্রত্যেককে ২০০ গ্রাম করে ওই মাছের রেনু দেয়া হয়। এরপর সেই রেনুগুলো হ্যাচারিতে বড় করে তাদের নিজস্ব পুকুরে চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন চাষীদের মাঝে সরবরাহ করেন। 

এ ব্যাপারে যশোর চাঁচড়া সবজিবাগ এলাকার রুপালীফিশ হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী শেখ মেজবাহ উদ্দীন বলেন, জি-৩ রুই মাছ প্রচলিত রুই মাছের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাং বেশি বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিকভাবে আমি এই মাছের চাষ করেছি এবং আরও কিছু চাষীর মাঝে এ মাছের পোনা সরবরাহ করেছি। প্রথম বছরেই মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি মাছ ৩ কেজি ৫০ গ্রাম ওজন হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে চাঁচড়ার ফাহাদ মৎস্য হ্যাচারির ফারুক নামে আরেকজন মাছ চাষী ৪ হাজার পিস এ মাছের পোনা নিয়ে পুকুরে চাষ করেন। তার পুকুরে প্রতি মাছই ১১ মাসের ব্যবধানে ৩ থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজন হয়েছে। কোনোটা এর চেয়েও বেশি হয়েছে বলে তিনি জানান।  

প্রায় একই কথা বলেন, চাঁচড়া মাতৃফিশ হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী জাহিদুর রহমান গোলদার। তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত তৃতীয় প্রজন্মের এ মাছ যশোরের চাষী পর্যায়ে বেশ সাড়া ফেলেছে। 

তিনি বলেন, প্রথম দিকে এই মাছ চাষে চাষীদের তেমন কোনো আগ্রহ ছিলোনা। এখন অনেকেই এই মাছ চাষের প্রতি ঝুকে পড়ছেন। তিনি বলেন, এ মাছগুলো হালদা, পদ্মা, ও যমুনা নদী হতে উৎপন্ন রুই মাছ এবং বানিজ্যিকভাবে সমাদৃত একটি হ্যাচারি থেকে সংগৃহিত। যেকারণে সহজেই মাছ চাষীরা উন্নত জাতের মাছের পোনা বা রেনু পেতে পারছেন। একারণে তারা কোনো ঝুঁকি ছাড়াই এ মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। 

চাঁচড়া মা ফাতিমা ফিশ হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী আলহাজ ফিরোজ খান বলেন, জি-৩ রুই মাছ বাংলাদেশের মাছ চাষকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার দীর্ঘ মাছ চাষের জীবনে এমন বেশি বর্ধণশীল মাছ আর কখনও দেখিনি। আমরা চাঁচড়ার ৬ জন হ্যাচারি মালিক এ মাছ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছি। আমার পুকুরে এখনও জি-৩ এর ৪৬০০ টি ব্রুড রয়েছে। যার প্রতিটিই তিন কেজির উপরে ওজন বলে তিনি জানান। 

এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ডফিশ যশোরের ফিশ ব্রিডিং এন্ড রেসার্স প্লাটফার্ম ম্যানেজার মাসুদ আকতার বলেন, পরীক্ষামূলক চাষের ফলাফলের পর ২০২০ ও ২০২১ সালে কিছু সংখ্যক হ্যাচারি ও নার্সারিকে জি-৩ রুই মাছের জাত সরবরাহ করা হয়। এর পাশাপাশি ওয়ার্ল্ডফিশ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে ১৯টি আধা-বাণিজ্যিক খামারে জি-৩ রুই মাছের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে প্রতি মাসে নমুনায়ন পদ্ধতিতে মাছের বৃদ্ধির হার পর্যবেক্ষণ করা হয়। 

তিনি বলেন, যশোরে ৬ টি হ্যাচারিতে এ মাছের রেনু সরবরাহ করা হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি হ্যাচারি মালিকরা এ রেনু থেকে পোনা বানিয়ে তা পুকুরে চাষ করে ব্যাপক সফল হয়েছেন।

 তিনি বলেন,‘’ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত জি-৩ রুই আগামি দিনে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত জি-৩ রুই মাছ চাষকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জেলা মৎস্য বিভাগ। 

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, তৃতীয় প্রজন্মের এ মাছ চাষের চাষী পর্যায়ে সম্প্রসারণে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা মাঠ পর্যায়ে ওয়ার্ল্ডফিশের এ গবেষণা যাচাই-বাছাই যা দেখেছি উন্নত পন্থায় এ মাছের অধিক বর্ধণশীল মাছ চাষ কৃষক পর্যায়ে বেশ সাড়া ফেলেছে। 

তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ঠিক একই পদ্ধতি দ্রুত বর্ধণশীল মাছের জাত নির্নয় করে সেখানকার চাষীরা বেশ লাভবান হচ্ছে। আশা করছি বাংলাদেশের মাছ চাষীরাও এর মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর