• বুধবার   ২৯ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪২৯

  • || ০৭ রমজান ১৪৪৪

সোনালী গমের শীষে কৃষকের স্বপ্ন

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৩  

রবি শস্যের মধ্যে গম একটি লাভজনক ফসল হলেও ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ৬ জেলায় ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। ছত্রাক জনিত এ রোগের প্রাদুর্ভাবে হাজার হাজার হেক্টর জমির গম পুড়িয়ে ফেলাসহ গম চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত ও পরপর ৩ বছর গম চাষ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ব্লাস্ট প্রতিরোধক নতুন জাতের বীজ উদ্ভাবনের পর আবার ধীরে ধীরে গম চাষ শুরু করে কৃষকেরা। 

এবার ঝিনাইদহে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে গম চাষ হয়েছে। আর গত ১ দশকের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ ফলনের আশা করে কৃষি অফিস বলছে চলতি মৌসুমে ১২২ কোটি টাকার ২০হাজার মেট্রিক টনের বেশি সম্ভব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা বৈশ্বিক মন্দাসহ খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে।

ঝিনাইদহে কোনো কোনো মাঠে গম কাটার উপযুক্ত হয়েছে। আবার কোথাও মাঠের পর মাঠ বাতাসে দোল খাচ্ছে কাঁচা-পাকা গমের সোনালী শীষ। সবুজ মাঠের দিকে তাকিয়ে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। ১০ থেকে ১৫ দিন পর জমি থেকে চাষিরা গম কাটা শুরু করবে। সোনালী গমের শীষে এবার মিশে যাবে কৃষকের স্বপ্ন।

জানা যায়, গত মৌসুমে ঝিনাইদহে ৪ হাজার ২৭৮ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল। আর চলতি মৌসুমে গম চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে তবে চাষ হয়েছে লক্ষমাত্রার চেয়েও বেশি ৫ হাজার ১৭৩ হেক্টর জমিতে। এবার গমের সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ২৭৯ মেট্রিক টন। বাজার দর অনুযায়ী যা ১২২ কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থাৎ ১২১ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

বাজারে গম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২৫শ টাকা মণ দরে। সম্ভাব্য বাম্পার ফলনের কারণে কৃষকেরা আশা করছে এবার বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ করে গম উৎপাদন হবে।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। যা মোট গম আবাদি জমির ৩ শতাংশ। এসব জেলায় ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গম চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত ও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

শৈলকুপার হাবিবপুর গ্রামের গম চাষি খন্দকার পলাশ বলেন, গম চাষে তেমন পানি, সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ও নিড়ানির প্রয়োজন হয় না, এতে খরচ অনেক কম। আর কম পরিশ্রমে অধিক লাভ করা যায়।

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, আনিসুর রহমান জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে গমের দামে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় দেশে গমের সাপ্লাই চেনে সৃষ্টি হয়েছে সমস্যা। 

কৃষি কর্মকর্তারা বলছে, সরকার এসব দিক বিবেচনায় কৃষকদের বীজ সহ ব্যাপক প্রণোদনা দেয়ায় গমের চাষ বেড়েছে, আবহাওয়াও এবার ছিল অনুকূলে। সব মিলিয়ে খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে দানাদার খাদ্য গম।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজগর আলী বলেন, খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা ঝিনাইদহে এবার আরো খাদ্য উদ্বৃত্ত হবে আশা করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্লাস্টের কারণে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গম চাষ নিষিদ্ধ ছিল। এরপর ব্লাস্ট প্রুভ জাত বারী-৩০, ৩২, ৩৩ উদ্ভাবনের পরে ক্রমেই গম চাষে ঝুকছে কৃষক। আর এবার আশাতীত ফলনের কথা জানান কর্মকর্তারা। 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ
আলোকিত সিরাজগঞ্জ