ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়েও নিয়ে যাওয়া যায়। এই উপজেলার অনেক কৃষক ফসলি জমিতে আদার চাষ করে লাভবান হতে পারেন নি। তাই তারা বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এছাড়াও এ পদ্ধতিতে ফলন ভালো হচ্ছে বলে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
জানা যায়, ফুলবাড়িয়া উপজেলার পুটিজানা ও এনায়েতপুর ইউনিয়নে বেশকিছু কৃষক আদা চাষে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। কৃষকরা প্রতি বছর ফসলি জমিতে আদা চাষ করে লাভের মুখ দেখতে পায়নি। তাই তারা বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
পুটিজানা ইউনিয়নের বেড়িবাড়ী গ্রামের কৃষক শংকর চন্দ্র পাল বলেন, আমি ৩০ শতাংশ পতিত জমিতে প্রায় ৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করছি। বস্তায় আদা চাষ খুব সহজ। এতে খরচও কম হয়। বস্তা, আদা, সার এবং পরিচর্যা মিলিয়ে বস্তা প্রতি খরচ ৩২ টাকা।
এনায়েতপুর ইউনিয়নের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, আমি ৬০০ বস্তায় আদা চাষ করছি। এই পদ্ধতিতে আদা চাষ খুব লাভজনক। ৬০০ বস্তা থেকে আমি প্রায় ১২০০ কেজি আদা উৎপাদন করতে পারবো। বাজারে বর্তমানে পাইকারি প্রতি কেজি আদা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। এই অনুপাতে সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, বস্তায় আদা চাষ করা খুব সহজ। এই পদ্ধতিতে গাছে মাটিবাহিত রোগ অনেক কম হয়। আর কোনো সমস্যা হলে বস্তা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নেওয়া যায়। বস্তা পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে, উঠানে বা বাড়ির আশেপাশের খালি জায়গায় চাষ করা যায়।
বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে মাটির সাথে ১ ঝুড়ি বালি, ১ ঝুড়ি গোবর সার ও দানাদার কীটনাশক ফুরাডান ৫জি ২৫ গ্রাম ভালো ভাবে মিশাতে হবে। তারপর ছত্রাকনাশক অটোস্টিন ২ গ্রাম এক লিটার পানিতে দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। অন্য ছত্রাকনাশকও ব্যবহার করা যাবে। তারপর বস্তায় ৩ টুকরো আদা পুতে দিতে হবে। শোধনের পর কন্দগুলো আধাঘণ্টা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। ২০-২৫ দিন পর গাছ বের হবে। কয়েক সপ্তাহ পরে আাদ গাছ বড় হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এই উপজেলায় প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হচ্ছে। যারা বস্তায় আদা চাষ করছেন আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মতিউর রহমান বলেন, বস্তায় আদা চাষ করলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। একবার আদা তুলে ফেললে সেই বস্তায় কোনো সার দেওয়া ছাড়া আবার আদা চাষ করা যায়। এতে খরচ একেবারে কমে যায়।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ