• বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১২ ১৪৩০

  • || ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

চাকরির পেছনে না ঘুরে সাইফুল এখন জৈব সার কারখানার মালিক

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২  

চাকরির পেছনে না ঘুরে টগবগে যুবক সাইফুল ইসলাম শাহেদ জৈব সার কারখানার মালিক হয়েছেন। নিজ এলাকা প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তুলেছেন এম আর সি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিডেট। 

জানা গেছে, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউপির বাতশিরি গ্রামে ২০০৯ সালে এই উদ্যোগ নিয়ে যুবক সাইফুল জৈব সার তৈরি করছেন। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ি থেকে ২০১৬ সালে রেজিস্ট্রেশন পায়। সাইফুল দাগনভূঞা উপজেলার একজন আদর্শ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিসমূহ ব্যবহার ও সম্প্রসারণে কাজ করে আসছেন। 

২০২১ সালে তিনি গোবর, মুরগির বিষ্টা-লিটার, ফেলনা চা-পাতা ও ট্রাইকোডার্মা ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি এম আর সি জৈব সার উৎপাদান করেন ২১০ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি পাইকারী হিসেবে ১০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। ২০২১ সালে ২১ লাখ টাকা জৈব সার বিক্রি করেন সাইফুল। এছাড়াও তিনি তার উৎপাদিত জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে সবজী বাগান (টমেটো, লাউ, কুমড়া, বেগুন ও লেটুস) এবং ৫০ শতাংশ জমিতে ফল বাগান (লেবু, আম) চাষ করেন।

দাগনভূঞায় সাড়া ফেলে সবজী ও ফল বাগান থেকে আয় করেন ৮০ হাজার টাকা। ট্রাইকোডার্মা বছরে মিশ্রিত কম্পোস্ট থেকে নিয়মিত জৈব সার উৎপাদন ও সরবরাহ করছেন। এই সার এখন ফেনী, নোয়াখালী, পার্বত্য চট্টগ্রাম, শেরপুর, জামালপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে, রয়েছে ভালো চাহিদা।

সাইফুল বলেন, সরকারি-বেসরকারিভাবে যদি কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে, সার ব্যবসায়ীদের জৈব সার বিক্রির জন্য রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয় এবং জৈব সারের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তাহলে কৃষক এই সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবে। তখন সার ব্যবসায়ীরা এই সার বিক্রি করবে। 

জৈবসার প্রতি শতকে সবজির জন্যে ৫ কেজি, পেঁয়াজ, আলু, ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসলের জন্য ৩ থেকে ৪ কেজি, মাছে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৬০ কেজি, ফল গাছে ৫ থেকে ৭ কেজি করে ব্যবহার করা যায়।

২০১৬ সালে সরকারি লাইসেন্স পাই। ১৬০ শতক জায়গার মধ্যে এই এম আর সি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। এই জৈব সার কেজি দশ টাকা করে বিক্রি করছি। বস্তা ৪০০ টাকা। ডেইরি ফার্ম থেকে গরুর গোবর ক্রয়, মুরগির ফার্ম থেকে বিষ্টা-লিটার ক্রয় ও লেবার এবং পরিবহনসহ কেজি প্রতি সাড়ে ছয় টাকা খরচ হয়। বিক্রি করছি কেজি প্রতি ১০ টাকা। 

দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা প্রায় সময় পরিদর্শনে আসেন। কোনো রকম সমস্যা হলে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছি। আমার এখানে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করে। রাজশাহী, টেকনাফ, চকরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনিং নিয়েছি।

জানা গেছে, উদ্যোক্তা সাইফুল ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২৮’ এর জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে মনোনিত হয়েছেন। 

কয়েক বছরের ব্যবধানে উদ্যোক্তা সাইফুলের জৈব সার কারখানাতে ১৪ জন শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে কাজ করে তারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব শ্রমিকদের ভেতরে ১০ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী শ্রমিক রয়েছে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জৈব সার উৎপাদনে অন্যান্য যে কাঁচামালের যোগান লাগে তার মধ্যে ট্রাইকো কম্পোষ্টের জন্য ট্রাইকো ডার্মা পাউডার, গরুর গোবর, প্রেস মাড আখের গান, কলাগাছ, কচুরিপানা, ছাই, খৈই চিটাগুড়, কাঠের গুড়া, সবজির উচ্ছিষ্ট, ডিমের খোসা, নিম খৈইল, হাড়ের গুড়া, শিং কুচি, গাছের পাতা পচা, ব্যবহৃত চা পাতা সহ ইত্যাদি কাঁচামাল লাগে। এগুলো একত্র করে পর্যায়ক্রমে সেডে পচন ক্রিয়ার মাধ্যমে ৪৫-৫৫ দিনের মধ্যে উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার বানানো হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকরা জানান, এমন জৈব সারের রয়েছে নানা উপকারিতা। ফলন বৃদ্ধি ও গুণগত মান বাড়ায়, সব ঋতুতে সকল ফসলে ব্যবহার করা যায়, জৈব সার বীজের অংকুরোদগমে সহায়তা করে, মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, মাটির গঠন ও প্রকৃত গুণ রক্ষা করে, মাটির উপকারী জীবাণুগুলোর বংশবৃদ্ধি ও কার্যকারিতা বাড়ায়, মাটিতে রস মজুদ রাখতে সহায়তা করে, ফলে অধিক সেচের প্রয়োজন হয় না। 

স্থানীয় কৃষক এবং সার ব্যবসায়ীরা জানান, তারা নিয়মিত উদ্যোক্তা সাইফুলের এম আর সি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সার ক্রয় করে বিক্রি করে থাকেন।

সার ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, কম মূল্যে পরিবেশ বান্ধব এবং নিরাপদ জৈব সার পেয়ে অনেক কৃষক উপকৃত হচ্ছেন।  

দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহি উদ্দিন মজুমদার জানান, রাজাপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে এম আর সি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে উঠেছে তা আমাদের জন্য সুখবর। কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে তাছাড়া উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জৈবসার ক্রয় করা হচ্ছে। উদ্যোক্তা সাইফুল কে সব ধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। 

উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লুৎফুল হায়দার ভূঁইয়া বলেন, এম আর সি জৈব সারে ট্রাইকোডার্মা মিশ্রণ করার ফলে এর গুণগত মান বৃদ্ধি হওয়ায় কৃষকরা এর সার ব্যবহার করলে ফসলের ছত্রাকজনিত সমস্যা হতে ফসলকে অনেকাংশে জৈব সারের মাধ্যমেই সমাধান করার সুযোগ আছে। 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ
আলোকিত সিরাজগঞ্জ