গ্রেফতাররা হলো- রাসেল মিয়া (১৮), সৌরভ (২১), আশরাফুল ইসলাম (১৭), জোবায়ের (১৭), আমির হামজা (১৯) ও সুজন পাটোয়ারি (১৭)। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩টি চাপাতি ও ৩টি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-১।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, গাজীপুরে একাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। তাদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ছোটখাট বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। তুচ্ছ ঘটনায় সিনিয়র গ্যাঙের সদস্যকে তুই বলে সম্মোধন করাকে কেন্দ্র করে গত ৩ সেপ্টেম্বর নুরুল ইসলামকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।
ঘটনার দুই দিন আগে নিহত নুরুল ইসলামের দীঘিরপাড় গ্রুপের ৬/৭ জন সদস্য স্থানীয় বালুর মাঠ এলাকায় আড্ডা দেয়ার সময় একই এলাকার রাসেল এর ‘ভাই-ব্রাদারস’ গ্রুপের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ভাই-ব্রাদার্স গ্রুপের সদস্যরা জুনিয়র গ্রুপের কাছে লাঞ্চিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে র্যাবের এই অধিনায়ক জানান, নুরুলের বাবা পেশায় পাখি বিক্রেতা ও মা গৃহিণী। ২ বোন ও ১ ভাই ভাইয়ের মধ্যে নুরুল বড়। অর্থের প্রয়োজনে পড়া-লেখা ছেড়ে নুরুল চা বিক্রি করে সংসারে সাহায্য করতো। ৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে পাশের এলাকা রাজদীঘির পাড়ে যায় নুরুল ও তার গ্রুপের কয়েকজন। আগে থেকেই তার বিরোধী গ্যাং ভাই-ব্রাদার্স গ্রুপের সদস্যরা ওৎ পেতে ছিল। নুরুল ওই এলাকায় গেলে ব্রাদার্স গ্রুপের ১০/১২ জন মিলে হঠাৎ আক্রমণ করে। আক্রমণ থেকে বাঁচতে নুরুল পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার গ্রুপের অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। ভাই-ব্রাদার্স গ্রুপের সদস্যরা পুকুর থেকে তুলে এনে নুরুলকে চাপাতি ও ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি অঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ওই দিনই সদর থানায় মামলা করা হয়।
ঘটনাটি সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ছায়া তদন্তে মাঠে নামে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। পরে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান অধিনায়ক।
এ সময় গ্রেফতারদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩টি চাপাতি ও ৩টি চাকু উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, রাসেল মূলত এই গ্যাঙের লিডার। সে স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র। এলাকায় কর্তৃত্ব খাটানোর জন্যই সে এই কিশোর গ্যাং ভাই-ব্রাদার্স গ্রুপ গঠন করে। এ গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্য স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অন্যরা পড়ালেখা করে না।
এলাকায় এমন কয়েকটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তাদের মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই নুরুলকে হত্যা করা হয় বলে গ্রেফতাররা স্বীকার করেছে।
এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আলোকিত সিরাজগঞ্জ