শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লিচুতে ভাগ্যবদল, ফুটপাত থেকে বাড়ি-গাড়ির মালিক

লিচুতে ভাগ্যবদল, ফুটপাত থেকে বাড়ি-গাড়ির মালিক

ছোটবেলায় আবুল হোসেন অভাব দেখেছেন খুব কাছ থেকে। যুবক বয়সে লিচুর মৌসুমে অনেক দূরের গ্রাম থেকে লিচু কিনে মাথায় করে কমপক্ষে ১৫ বছর বিক্রি করেছেন শহরের ফুটপাতে বসে। পরবর্তীতে নিজেই লিচু চাষ করে পাল্টে ফেলেছেন তার আগের দিন। হয়েছেন বাড়ি-গাড়ির মালিক। 

কঠোর পরিশ্রমী ও সৎ আবুল হোসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার খয়েরতলা গ্রামের দলিল উদ্দীন মণ্ডলের ছেলে। এ বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য বছরের মতো বাগানের সাত বিঘা জমির ১৪৬টি গাছে ধরেছে প্রচুর লিচু। করোনার কারণে বিক্রি বাধাগ্রস্ত না হলেও এ বছরও ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা আসবে। 

আবুল হোসেনের লিচু বাগানে সরেজমিনে দেখা যায়,পাশাপাশি দুটি ক্ষেতের প্রায় ৭ বিঘা জমির ওপর লাগানো হয়েছে মোজাফ্ফরপুরী জাতের লিচু। দু’ক্ষেত মিলে মোট ১৪৬ টি গাছ। গাছগুলোতে লিচু ধরেছে প্রচুর। থোকায় থোকায় ধরে থাকা লিচুর ভারে ডালাপালাগুলো মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। দেখা যায় একপাশে শ্রমিকেরা লিচু ভাঙছে অন্যদিকে আবুল হোসেন নিজে পাইকারদের লিচু দিয়ে টাকা বুঝে নিচ্ছেন। 

কোনো কাজ ধৈর্য আর আন্তরিকতার সঙ্গে করলে তার ফল অবশ্যই পাওয়া যায় উল্লেখ করে আবুল হোসেন বলেন, এক সময় আমার অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। ঠিক মতো সংসার চালাতে না পেরে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেয়েছি। লিচুর সময়ে দূরের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে লিচু কিনে কাদা রাস্তা দিয়ে মাথায় করে বয়ে এনে শহরের ফুটপাতে বসে বিক্রি করতাম। আর বছরের অন্য সময়ে করতাম অন্য ফলের ব্যবসা। 

এভাবে ৭-৮ বছর ব্যবসার মাধ্যমে কিছু টাকা সঞ্চয় করি। তখন থেকে ভাবনা ছিল নিজে একটা লিচু বাগানের মালিক হতে পারলে সংসারের অভাব দূর হতো। কেননা গাছের প্রতি পিচ লিচু গুনে টাকা আসে। কিছু দিনের মধ্যে (আজ থেকে ২৭ বছর আগে) শুনতে পাই গ্রামের কাঠি মণ্ডল এক দাগের ১ একর ৩৭ শতক জমি বিক্রি করবেন। তখনকার দিনে জমিটি ছিল অনাবাদি তাই দাম ছিল কম। সে সময়ে পুরোপুরি টাকা না থাকলেও সংসারের সব বিক্রি করে একপর্যায়ে জমিটি কেনার জন্য ঝুঁকি নেই। 

পুরো জমিটি তখনকার দিনে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম চূড়ান্ত করি। বাড়িতে জমানো কিছু  টাকা ধার দেনা আর বাড়িতে পালন করা দুটি গরু বিক্রি করে জমির অর্ধেক টাকা পরিশোধ করি। এরপর বাকি টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। কিন্তু জমির মালিক আমাকে খুব ভালোবাসতেন। তাই টাকা পরিশোধের জন্য তিনি আমাকে তিন বছর পর্যন্ত সময় দেন। প্রথম বছরেই জমির মালিকের পরামর্শে ওই জমিতেই ১০০ মোজাফ্ফরপুরী জাতের লিচুর চারা লাগিয়ে দিই। ভিতরে চাষ করতে থাকি অন্য সাথী ফসলের। 

২ বছর পরেই গাছ ভরে ধরতে থাকে লিচু। আসতে থাকে টাকা। একপর্যায়ে লিচুর টাকায় জমির টাকা পরিশোধ হয়ে যায়। পরের ২ বছরে পরিশোধ হয় সব ধার দেনা। এরপর আসে লাভের পালা। প্রতিবছরই লিচু বাগান থেকে টাকা আসতে থাকে। এর কয়েক বছর পরে পাশেই আরেকটি জমি কিনে একই জাতের লিচুর চারা রোপন করি। 

তিনি আরো বলেন, বিগত ২৫ বছর ধরে লিচু বিক্রির টাকায় একদিকে সংসার চালিয়েছি অপর দিকে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। আমার ৪ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বাবুল আক্তার এসএসসি পাশের পর আমার সঙ্গে সংসার দেখাশুনা করছে। অন্য ছেলেদের মধ্যে রিপন আহম্মেদ লোক প্রশাসনে ও ডাবলু মিয়া রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে চাকরি করছে। ছোট ছেলে মামুনুর রশিদ হাফেজি শেষ করে মুফতি পড়ছে। এছাড়া সারাজীবনের কঠোর পরিশ্রমের টাকায় ৪টি ট্রাক কিনেছি। 

তিনি বলেন, এ বছর লিচু ভাঙা শুরু হয়েছে। বাজারে লিচুর দামও ভালো। অন্য বছরগুলোর মতো এ বছরেও দুটি বাগান থেকে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা আসবে বলে আশা করছি। 

আবুল হোসেনের ছেলে বর্তমানে আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির মার্কেটিংয়ের কর্মকর্তা ডাবলু মিয়া বলেন, এক সময় মাঠে আমাদের কোনো চাষযোগ্য জমি ছিল না। নিজে লেখাপড়া না জানলেও বাবা আমাদেরকে লেখাপড়া শেখাতে ভুল করেননি। একমাত্র লিচু চাষ করেই সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বাবা কাজ ছাড়া কিছু বোঝেন না। তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন সৎ রোজগারের কোনো কাজ পৃথিবীতে ছোট নয়। অবিচল ধৈর্যশীল ও কাজে যত্মশীল হলে একদিন সফল হওয়া যায়। 

প্রতিবেশী আছাদুজ্জামান বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি আবুল হোসেন অত্যন্ত সৎ ও পরিশ্রমী। এক সময় অত্যন্ত কষ্টে দিন গেলেও এখন তার সংসারে সুদিন এসেছে। বিশেষ করে লিচু চাষের মাধ্যমেই আজ হয়েছেন গাড়ি বাড়ির মালিক। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছেন। তারপরও তার মধ্যে কোন অহমিকা নেই। নিতান্তই সাদাসিধে একজন মানুষ। 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, আমি আবুল হোসেনের লিচু বাগানে গিয়েছি। দুটি বাগান মিলে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে লিচু গাছ রয়েছে। চলতি বছর ঝড়ে এ অঞ্চলের লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপরও কৃষক আবুল হোসেনের বাগানে যে পরিমাণ লিচু এখনো ধরে আছে তা দেখার মতো। সবচেয়ে বড় কথা একদিন ফুটপাতে বসে যে ব্যক্তি পরের গাছের লিচু বিক্রি করে সংসার চালাতেন। সেই ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে লিচু চাষ করে আজ গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছেন। একজন কৃষকের এমন সফলতার গল্প শুনলে কার না ভালো লাগে। 

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
ঈদের দিন ৩ হাসপাতাল পরিদর্শন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই