বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ্য স্ত্রীর সন্ধানে

যোগ্য স্ত্রীর সন্ধানে

শারকি ইবনে কিতামি বর্ণনা করেন ‘শান’ নামীয় এক ব্যক্তি আরবের প্রসিদ্ধ জ্ঞানী ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বিয়ে করতে চাইছিলেন কিন্তু জ্ঞান, গরিমা, বুদ্ধিমত্তায় তার সমপর্যায়ের কোনো মেয়েকে পাচ্ছিলেন না।

শেষমেষ হতাশ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন। কসম খেয়ে বললেন যতোদিন আমার উপযুক্ত মেয়েকে বিয়ে না করতে পারবো, ঘরে ফিরে আসবো না।

রাস্তায় চলতে চলতে এক লোকের সঙ্গে দেখা। পরিচয় পর্ব সারার পর শান জিজ্ঞাসা করলেন
: আপনি কোথায় যাবেন?
: অমুক স্থানে যাবো।
: আরে, আমিও তো সেখানেই যাবো। চলুন একসঙ্গে যাওয়া যাক।
: বেশ তো চলুন।

দু’জন একসঙ্গে রওয়ানা হলেন। কিছুদুর যাওয়ার পর শান তার সফরসঙ্গীকে এক আজব প্রশ্ন করলেন।
আপনি আমাকে বহন করবেন, নাকি আমি আপনাকে বহন করবো?
তিনি এ অদ্ভুত প্রশ্নের কোনো অর্থ খুঁজে পেলেন না।
ভ্রু কুঁচকে বললেন, তার মানে? আমাদের দু’জনেরই তো সওয়ারী আছে। তারাই আমাদের সুন্দরভাবে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে একে অন্যকে বহন করার কথা আসছে কি করে? তাছাড়া এক সওয়ার অন্য সওয়ারকে বহন করবেই বা কি করে?
তার জবাব শুনে শান কিছু বললেন না। চুপচাপ এগুতে লাগলেন।
চলতে চলতে রাস্তার পাশে একটি ফসলের ক্ষেত দৃষ্টিগোচর হলো। ফসল পুরোপুরি পেকে গিয়েছিল। ক’দিন পরই হয়তো কাটা হবে।
শান এবার আরো অদ্ভুত প্রশ্ন করলেন?
: জনাব, আপনার কি জানা আছে এই ক্ষেতের ফসল খাওয়া হয়ে গেছে নাকি হয়নি?
সঙ্গী লোকটি এবার ধমকের স্বরে বললেন, আপনার কি মাথা খারাপ? দেখতে পাচ্ছেন না ফসল এখনো কাটাই হয়নি। তাহলে তা খাওয়ার প্রশ্ন কোথা থেকে আসছে?  যত্তোসব ফালতু প্রশ্ন।

শান কিছু না বলে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
কিছুদুর যাওয়ার পর তারা দেখলেন, কিছুলোক একটি জানাযা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।
শান সফরসঙ্গীকে বললেন আপনি কি জানেন, খাটিয়ায় শোয়া লোকটি জীবিত না মৃত?
এবার তো লোকটি বিরক্তির চুড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেল।
কঠিন গলায় বললো, এই মিয়া দাঁড়ান। এক পাও এগোবেন না বলছি। ঘোড়া থেকে নামেন।

শান ঘোড়া থেকে নামলে লোকটি বললো, ভাই, সত্যি করে বলুন তো আপনি কি কোনো পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে এসেছেন? নিশ্চয়ই পালিয়ে এসেছেন, নয়তো এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করতে পারতেন না। আপনার কি ধারণা! এই লোকেরা জীবিত একজন মানুষকে দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছে? যা বলেছেন, বলেছেন, আর বলবেন না। মানুষ আপনার এই কথা শুনলে মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না। এখন চলেন, তাড়াতাড়ি এই এলাকা থেকে ফুটি। আপনারে সঙ্গে লইয়া  তো দেখি এক বিপদে পড়লাম। আপনি কোন সময় কারে কি কইবেন আর আপনার সরঙ্গ আছি, দেইখ্যা পাবলিক আপনার লগে আমারেও রাম ধোলাই দিবো।

শান আর কথা না বাড়িয়ে এগুতে লাগলেন।
চলতে চলতে সফর শেষ হয়ে গেল। সফরসঙ্গী লোকটি শানকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন।
লোকটির একটি মেয়ে ছিলো অনিন্দ্যসুন্দরী। মেয়েটি বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো, বাবা তোমার সঙ্গে যে ছেলেটি এসেছে সে কে?
: আর বলিস না মা। ওর মনে হয় মাথাটা সত্যিই খারাপ। সারা সফরে আমার কান ঝালা পালা করে দিয়ে যত্তোসব অদ্ভুত প্রশ্ন করেছে।
মেয়েটির কন্ঠে কৌতুহল, তাই না কি? আচ্ছা আমাকে শুনাও তো তার অদ্ভুত প্রশ্নগুলো।
লোকটি এবার পুরো ঘটনা শুনালো। সব শুনে মেয়েটি ঝিম মেরে বসে রইলো।
একসময় মাথা উঁচু করে ধীরে ধীরে বলতে লাগলো
বাবা, যে প্রশ্নগুলোকে তুমি অর্থহীন ও পাগলের প্রলাপ মনে করেছো, সেগুলো খুবই উচ্চস্তরের প্রশ্ন। যা তুমি বুঝতে পারোনি। আমি এগুলোর ব্যাখা দিচ্ছি।
প্রথম প্রশ্ন, আপনি আমাকে বহন করবেন না আমি আপনাকে বহন করবো।
তার এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য হলো সফরের একঘেয়েমি দূর করার জন্য আপনি আমাকে কোনো ঘটনা শুনাবেন, নাকি আমি আপনাকে শুনাবো? যেন সফরের সময়টা আনন্দের সঙ্গে কেটে যায়। বিরক্তিভাব, একঘেয়েমি ক্লান্তি আমাদেরকে যথাসম্ভব কম স্পর্শ করে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন, এই ক্ষেতের ফসল খাওয়া হয়েছে নাকি হয়নি?
এ প্রশ্নের উদ্দেশ্য হলো ক্ষেতের মালিক ফসল বিক্রি করে এর মূল্য খেয়ে ফেলেছে কি না? অর্থাৎ ফসল দ্বারা তিনি এর মূল্য বুঝিয়েছেন, শস্য বুঝাননি।

৩য় প্রশ্ন, খাটিয়ার শোয়া লোকটি জীবিত না মৃত? এর উদ্দেশ্য হলো মৃত কি জীবদ্দশায় এমন কোনো মহৎ কর্ম করেছে যা মৃত্যুর পরে ও তার নামকে অমর করে রাখবে?

মেয়েটির ব্যাখা শুনে লোকটি অত্যন্ত অবাক হলো। ভাবলো আমার সফরসঙ্গী ছেলেটি নিশ্চয়ই অনেক বড় জ্ঞানী হবে।
তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে উঠে শানকে সব ব্যাখা শুনালো। সব শুনে শান ভাবলো যার সন্ধানে আমি গৃহত্যাগী হয়ে পথে পথে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি। সেই মেয়েকে এখানে খুঁজে পেয়েছি। মেয়েটির বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে শান তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।

মেয়ের বাবাও তা মঞ্জুর করলেন। সেখানেই বিবাহ হয়ে গেল। বিয়ের পর তিনি নববধুকে নিয়ে নিজ এলাকায় ফিরে এলেন।

এখানেও মেয়েটি স্বীয় বিচক্ষণতায় শানের আত্মীয় স্বজনের মন জয় করলেন।

সূত্র : প্রতিভার গল্প

আলোকিত সিরাজগঞ্জ

শিরোনাম:

স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট
এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
পুলিশকে সাহায্য করবে ক্রাইম জিপিটি!
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলজীবনের মজার স্মৃতিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
কাজিপুরে ভার্মি কম্পোস্ট সার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
মেয়েদের স্কুলের বেতন না দিয়ে ধোনিদের খেলা দেখলেন তিনি
‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর